
পদ্মার চেয়ে বড় সেতু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ১০ কিলোমিটারের এই সেতুটি দ্বীপ জেলা ভোলাকে বরিশালের সাথে যুক্ত করবে।
এখন পর্যন্ত দেশের দীর্ঘতম সেতু পদ্মা। যার দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। কিন্তু এবার বরিশাল আর ভোলার মধ্যে নির্মিত হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় সেতু। যেটি তেঁতুলিয়া নদীর উপর নির্মিত হবে। জরিপ এবং আলোচনার ভিত্তিতে ভোলার ভেদুরিয়া ফেরিঘাট এবং বরিশালের লাহারহাট ফেরিঘাট বরাবর সেতুটি বানানোর জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে শুর হয় এই সেতুর সমীক্ষার কাজ। সেতু নির্মানের জন্য বরিশার ভোলা অঞ্চলের তিনটি নদীর গত ৪০ বছরের গতি-প্রকৃতির উপর গবেষণা এবং সমীক্ষা করা হয়। সমীক্ষা অনুসারে ১০ কিলোমিটার সেতুর মধ্যে প্র্রায় ৩ কিরোমিটার শ্রীপুর চরের উপর দিয়ে যাবে। দেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম এই সেতুর ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৯ শত ২২ কোটি টাকা। যা নির্মানাধীন পদ্মা সেতুর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, কেননা প্রস্তাবিত ভোলা বরিশাল সেতুতে রেল লাইন না থাকায় এর ব্যয় পদ্মা সেতুর থেকে কম হবে। তবে সেতুটির নকশা চুড়ান্ত হওয়ার পর এর ব্যয় আরও বাড়তে পারে। এই সেতু নির্মানের জন্য জমি অধিগ্রহন করা হচ্ছে প্রায় ১৩০০ একর। সেতুতে স্পান বসবে ৫৮টি। জানা যায় অবস্থা ভেদে এক একটা স্পানের দৈর্ঘ্য হবে ১১০-২০০ মিটার। তবে সেতুটি পদ্মা সেতুর মত ডাবল ডেকার নয় এটি হচ্ছে সড়ক সেতু। মূলত পদ্মার মত খড়স্রতা নয় এখানের নদী যেকারণে নদী শাষনের খরচ ও কম। তাই জটিলতা খুব একটা বেশি হবে না। ধারনা করা হচ্ছে সেতু নির্মান কাজ শেষ হলে ২০৩৪ সালে ১৫ হাজার ৬২০ টি এবং ২০৫৪ সালে ৫৬ হাজার ৭০১ টি গাড়ি চলাচল করবে।

চীন এবং দক্ষিন কোরিয়া ইতোমধ্যে প্রকল্পটির অর্ধায়ণে আগ্রহ দেখিয়েছে। ফান্ডিং উৎসের উপর মূলত নির্ভর করে এধরণের মেগাপ্রজেক্টের কাজ। এটা শেষ হতে ৪-৫ বছর সময় লাগবে বলে জানান সেতু কতৃপক্ষ। সেতুটি নির্মিত হলে দক্ষিণের দুটি জেলা বলিশাল এবং ভোলার মধ্যে যাতায়াতের সময় কম লাগবে। এ সেতু দিয়ে ভোলা থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আনার সুযোগ সৃষ্টি হবে। কেননা ভোলার শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রের প্রায় ৩২ কিলোমিটার উত্তরে ভেদুরয়া ইউনিয়নের প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। জানা যায় গ্যাসের সন্ধান পাওয়ার পর ভোলার গ্যাসের রিজার্ভ দাড়িয়েছে ১.৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুটে।
বরিশাল বিভাগের পূর্ব অংশ ভোলা জেলা হলেও তেঁতুলিয়া নদী মূল ভুখন্ড থেকে আলাদা করেছে। যেকারণে ভোলার সঙ্গে বরিশালের সরাসরি স্থল যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থা নেই। ভোলা যাওয়ার একমাত্র উপায় হল নদীপথ। সেতুর সম্ভবতা জরিপের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ভোলা থেকে যাত্রী এবং পন্য পরিবহণ নৌকা এবং লঞ্চের উপর নির্ভরশীল। যা এই জেলার আর্থ সামাজিক উন্নয়ণে প্রভাব ফেলছে। সেতু না থাকায় দুই জেলার ব্যবসায়ীদের পণ্য নিয়েও লোকসানের মুখে পরতে হয়। এই সেতুটি নির্মিত হলে তাদের সমস্যার সমাধান হবে। এছাড়া সেতুর নিচের অংশের নদীর মাঝখানের চরগুলোতে ইকোনোমিক জোন গড়ে তোলাও সহজ হবে। এ সেতু নির্মিত হরে সুদুর ভোলাবাসীই নয় দক্ষিণ অঞ্চলসহ দেশের অর্থনীতিতে বিশাল এক বিপ্লব ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।